এবার রাতে কোনো ভোট হবে না : (সিইসি)
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর পিটিআই মিলনায়তনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি, রাতে ভোট হবে না। রাতে ভোটসহ যেসব কথাবার্তা হয়েছে– আমরা ৯৯ ভাগ নয়, শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি সেটি কোনো অবস্থাতেই হবে না। এজন্য অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সকালে যাবে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর পিটিআই মিলনায়তনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
কমলগঞ্জে অল্প খরচে কম্পিউটার শিখতে আজই রেজিষ্ট্রেশন করুন
‘রাতের ভোট’ নিয়ে যে বিতর্ক, সে ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটবে না। আর এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে অনেক কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যালট পেপার সকালে না গিয়ে ১০ দিন আগে বা ১০ মাস আগে গেলেও প্রার্থীরা তাদের পোলিং এজেন্ট দিয়ে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে বাক্সগুলো খালি কি না দেখে নিতে পারবেন। তারপরও আমরা বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য ব্যালট পেপার সকালে পাঠাব। ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা অবশ্যই দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নেবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি না। তারা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গণনা ও ফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সবকিছু সঠিকভাবে হয়েছে কি না জানবেন।’
নির্বাচন যেকোনো মূল্যে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে অনেকে কালো টাকার বিনিময়ে পেশাদার কিছু সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন। তারা যাতে ভোটকে প্রভাবিত না করতে পারে সেই বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।’
নির্বাচনে পেশিশক্তির উদ্ভব ঘটলে প্রিজাইডিং অফিসারকে ভোট বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রিজাইডিং অফিসার যদি বন্ধ না করেন রিটার্নিং অফিসার অবহিত হলে তিনি বন্ধ করে দেবেন। তিনিও যদি বন্ধ না করেন, তাহলে আমরা ঢাকায় অবহিত হলে সেখান থেকে বন্ধ করে দেব।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা নির্বাহী প্রশাসন ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। এখানে ওসি, ইউএনও, ডিসি ও এসপিদের বক্তব্য শুনেছি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি। আমরাও যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। তারা আমাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের কথা বলেছেন। পোস্টার ছেঁড়াছিঁড়ি, দুয়েক ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা আমাদের জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণে তারা সন্তুষ্ট।’
সিইসি আরও বলেন, ‘ভোটাররা ভোট যেখানেই দেবেন সেখান থেকে আরেক জায়গায় যাবে না, সেটি আমরা শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি। ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ফুটে উঠবে মিডিয়ার মাধ্যমে। মিডিয়ার কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরেও থাকবেন এবং ভেতরেও থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে না। তারা সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন এবং ভেতরে ঢুকে সবই ছবি তুলতে পারবেন। সত্য-মিথ্যা জনগণকে জানাতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি যেখানে দুই ঘণ্টা পর পর প্রতিটি কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট পড়ল সেখানে ইনপুট দেওয়া হবে। মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপ ডাউনলোড করে সেটা সবাই জানতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দশটার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এজন্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপক নিয়েছি। যাতে ভোটগ্রহণের সত্যতা মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে।’
কেন্দ্রে যাতে কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে , সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা তাদের আরেকটি বার্তা দিয়েছি, যেদিন ভোটগ্রহণ করা হবে সেদিনের বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরে থাকবে। ভোটটা কি অবাধ হলো, সেখানে কারচুপি হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত করার জন্য যারা ভোট পরিচালনা করবেন অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে, কেন্দ্রে যাতে কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি প্রবেশ না করে। আমরা কঠিন বার্তা দিয়েছি, এ ধরনের কোনো কিছু যাতে না হয়।’
এর আগে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সকালে নগরীর এলজিইডি ভবনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে দুপুরে নগরীর পিটিআই মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক, জেলার পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে মতবিনিময় করেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার সচিব মো. জাহাংগীর আলম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস.এম শফিউল্লাহ।
No comments