৩৬ বছরে পদার্পণ করলো ইত্যাদি
দর্শকদের ভালোবাসায় ধন্য হয়ে ইত্যাদি ২০২৪- এ পদার্পণ করেছে ৩৬ বছরে। প্রতি বছরের মতো গত বছরও ইত্যাদি ছিল সবার পছন্দের শীর্ষে। মিডিয়া জগতে এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এত দীর্ঘ সময় ধরে চললেও ইত্যাদি এখনো টিভিতে-অনলাইনে সেরা অনুষ্ঠান, ইত্যাদি দেখার অভ্যাসের পরিবর্তন হয়নি।
টিভির দর্শকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অনলাইন দর্শক। সেখানেও লাখ লাখ লোক দেখছেন তাদের ভালোবাসার ইত্যাদি। কারণ ইত্যাদি যেমন শিকড়ের সন্ধান করে, তেমনি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-শিল্প-সংস্কৃতি-প্রত্ন নিদর্শন-প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানগুলোকে তুলে ধরে প্রতিটি পর্বে-যা আর কোনো অনুষ্ঠানেই দেখা যায় না। এবারের পর্ব চিত্রায়িত হয়েছে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারে।
শুরুতে তাই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বরেণ্য উপস্থাপক হানিফ সংকেত মৌলভীবাজার নিয়ে ছন্দে ছন্দে বললেন, চায়ের রাজ্যের রাজধানী এ মৌলভীবাজার, চারদিকে তার সবুজে সবুজ, তুলনা হয় না যার। শুধু এটুকুই নয়, পুরো অনুষ্ঠানেই ছিল ছন্দ ও শব্দের অসাধারণ সমন্বয়। হানিফ সংকেতের এ ছন্দময় উপস্থাপনা যেমন ইত্যাদির আকর্ষণ, তেমনি প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে শব্দের ছন্দ তৈরি অত্যন্ত কঠিন। শুরুতেই মৌলভীবাজারকে নিয়ে করা প্রতিবেদনে ওঠে আসে পুরো মৌলভীবাজারের চিত্র।
অর্থাৎ এক নজরে মৌলভীবাজার। এরপর প্রতিবারের মতো অর্ধ শতাধিক স্থানীয় নৃত্যশিল্পীকে নিয়ে পরিবেশিত হয় মৌলভীবাজারের পরিচিতিমূলক গান। মৌলভীবাজার যেহেতু চায়ের জন্য বিখ্যাত তাই চায়ের ওপর প্রতিবেদনটিও ছিল দৃষ্টিনন্দন ও তথ্যসমৃদ্ধ। এ ছাড়াও হানিফ সংকেত নিজে উপস্থিত থেকে এ অঞ্চলের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান তুলে ধরেছেন। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, শীতল পাটি, আতর-আগর, খাসিয়া পল্লীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগের ওপর সরেজমিন প্রতিবেদন মৌলভীবাজারের প্রতি দর্শনার্থী এবং পর্যটকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেবে।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমানের ওপর প্রতিবেদনটি মহান বিজয়ের মাসে এক অনন্য শ্রদ্ধার্ঘ্য। মৌলভীবাজারের শিল্পী সেলিম চৌধুরী ও সিলেটের তসিবার দ্বৈত সংগীতটি ছিল অত্যন্ত শ্রুতিমধুর। মাটির মানুষবিষয়ক নাটিকা, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির ওপর তীর্যক পরিবেশনা-জ্যোতিষের কাছে গিয়ে আগামীতে দামের অবস্থা কী হবে জানতে চাওয়া, চামচামি শেখার কোচিং ক্লাস, আমাদের গান, নাটক, সিনেমাতে অশ্লীলতার প্রতিবাদে শোক স্টুডিও- ইত্যাদি বিষয় অত্যন্ত সময়োপযোগী। যা দর্শকদেরও মনের কথা। তথাকথিত তারকা নামধারী কিছু শিল্পী নামক অশিল্পীর চরিত্র তুলে ধরে পরিবেশিত নাটিকা দুটি ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী। ভালো লেগেছে, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য ও স্মারক সংগ্রাহক বিকুল চক্রবর্তীর ওপর প্রতিবেদন এবং স্ট্রিট ফুড জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে ইত্যাদির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ। অপচনশীল পদার্থ পলিথিন বিক্রি নয়, ইত্যাদিতে দেখানো হলো মৌলভীবাজার পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত পলিথিন কেনার ব্যতিক্রমী পলিথিনের হাট। যা অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। শেষাংশের প্রতিবেদনটিও ছিল হৃদয়ছোঁয়া। সন্তানদের নিয়ে একজন আদর্শ ও সংগ্রামী মায়ের কষ্ট এবং জীবনযুদ্ধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। একজন চা শ্রমিক হয়েও মীরা গোয়ালা একবেলা খেয়ে, কখনো না খেয়ে সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলেছেন। সন্তানরাও মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য কষ্ট সহ্য করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। প্রতিবেদনটি দর্শকদের অশ্রুসজল করেছে। আমাদের সমাজে অর্থবিত্তে সম্পদশালী পরিবারের অনেক সন্তান এখন হয়ে গেছে পথভ্রষ্ট-বিপথগামী। মীরা গোয়ালা একজন আদর্শ মা। তার সন্তানরাও আদর্শ সন্তান। আর এসব চিত্র তুলে ধরে বলেই এখনো দর্শক হৃদয়ে সেরার আসনটি দখল করে আছে হানিফ সংকেত এবং তাঁর শিক্ষা-তথ্য ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
No comments